রাতকানা রোগের কারণ ও লক্ষণ এবং প্রতিরোধে করণীয়

 পুষ্টিকর খাবার শরীরের জন্য উপকারী।

রাতকানা রোগ ,যা চিকিৎসকীয় ভাবে নাইকটা লোপিয়া(Nyctalopia) নামে পরিচিত, একটি দৃষ্টির সংক্রান্ত সমস্যা যা কম আলো বা অন্ধকার পরিবেশে স্পষ্ট ভাবে দেখতে অসুবিধা সৃষ্টি করে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে এটি প্রায়শই ভিটামিন A- এর অভাব, চোখের রোগ বা জেনেটিক কারণে হয়। এটি কোন স্বতন্ত্র রোগ নয়, বরং অন্য কোন অন্তর্নিহিত সমস্যার লক্ষণ।

এই রোগটি দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে রাতে গাড়ি চালানো বা অন্ধকার ঘরে চলা চলে ।এই নিবন্ধনে আমরা রাতকানা রোগের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায় গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যাতে আপনি এটি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে পারেন , এর জন্য সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে দেখুন ।

পোস্ট সূচিপত্রঃরাতকানা রোগের কারন সমূহ

  • ভিটামিন এ- এর অভাব
  • চোখের অন্যান্য রোগ
  • জেনেটিক বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • বয়সজনিত কারণ
  • রাতকানা রোগের লক্ষণ সমূহ
  • প্রতিরোধে করণীয় উপায়
  • কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
  • শেষ কথা

রাতকানা রোগের কারণ সমূহ

রাতকানা রোগের কারণগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যা চোখের অভ্যন্তরীণ অংশ যেমন- অপটিক নার্ভ, রেটিনা বা লেন্সকে প্রভাবিত করে। এর প্রধান কারণ গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো-.

১ .ভিটামিন এ- এর অভাব


 ভিটামিন এ এর অভাব রাতকানা রোগের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। কারণ ভিটামিন A-রেটিনার রড সেলগুলোকে সক্রিয় রাখে, যা কম আলোয় দেখার জন্য দায়ী। অভাব হলে রড সেলগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না।এটি প্রায়শই অপুষ্টি ,মালঅ্যাবসরপশন(যেমন গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি পর) বা দীর্ঘদিনের ডায়ারিয়া থেকে হয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি বেশি দেখা যায়, যেখানে খাদ্য অভাব একটি সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, যকৃতের রোগ বা ক্রোনস ডিজিজের কারণে ভিটামিন  A শোষণ কমে যায়, ফলে রাতকানা রোগ হয়। তবে কচু শাক চোখের জন্য অনেক উপকারী। তাই রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকলকেই সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • দুরদৃষ্টির সমস্যা বা মায়োপিয়াঃ(Nearsightedness) যারা দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পান না,তাদের ক্ষেত্রে রাতে দৃষ্টি আরো খারাপ হয়। এটি চোখের লেন্সের আকারের কারণে হয়, যা আলোকে সঠিকভাবে ফোকাস করতে পারেনা। যুবকদের মধ্যে এটি সাধারণ, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে কাজ করেন। রাতে কম আলো থাকায় এই সমস্যা বাড়ে।
  • অপুষ্টির ফলস্বরূপঃ এটি অপুষ্টির ফলস্বরূপ হয়ে থাকে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে যেমন বাংলাদেশ ।শিশুদের মধ্যে ৬ বছরের নিচে এটি বেশি দেখা যায়। কারণ অপুষ্টি, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া নিউমোনিয়া, হাম বা ম্যালেরিয়ার মত রোগের ফলে ভিটামিন শোষিত না হওয়া। জন্মকালীন কম ওজনের শিশুরাও ঝুঁকিপূর্ণ। 
  • কিসে পাওয়া যায়ঃ ভিটামিন এ মাছের লিভার, দু্‌ধ, ডিম,গাজর, কলিজা,পালং শাক ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। এর অভাবে চোখের শুস্কতা রোগ শুরু হয়, যার প্রথম পর্যায়ই রাত কানা।
  • পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাঃ যেমন সিলিয়াক ডিজিজ বা ক্রোনস ডিজিজ,যা ভিটামিন এ শোষণে বাধা দেয়।
  • প্রভাবঃ দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি হলে জেরফ থালমিয়া এবং এমনটি পূর্ণাঙ্গ অন্ধত্বও হতে পারে।
  • মাথা ব্যথা বা চোখে চাপঃ কম আলোতে দেখার চেষ্টা করার সময় চোখের চাপ বা মাথাব্যথা  অনুভব হতে পারে।

২. চোখের অন্যান্য রোগ

  •  কিছু চোখের রোগ রাতকানার কারণ হতে পারে,যেমন-
  • গ্লকোমাঃ(Glaucoma) চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়লে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়,যার দৃস্টি সংকেত মস্তিষ্কে পাঠায়। রাতকানা রোগ সৃষ্টি করে এবং অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ এটি ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
  • ক্যাটার্যাক্টসঃ(Cataracts) চোখের লেন্স মেঘলা হয়ে যাওয়ায় আলোর সঠিকভাবে রেটিনায় পৌঁছে না। ডায়াবেটিস বা ধূমপান এটিকে ত্বরান্বিত করে। এটি বয়স্কদের মধ্যে সাধারণ এবং রাতে দৃষ্টি অস্পষ্ট করে।
  • ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিঃ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রেটিনা প্রভাবিত হয়। দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসএটির প্রধান কারণ।এটি রাতে দেখার ক্ষমতা কমায়।

৩.জেনেটিক বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ

 যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা বা আশার সিন্ড্রোম । এগুলোতে রেটিনার সেলগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়, ফলে রাতকানা রোগ হয়। এটি জন্মগত এবং প্রায়শই শৈশবে  শুরু হয় ।এছাড়া,কিছু ওষুধ যেমন,অ্যান্টিহিস্টামিন,অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট  জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল রাতকানা সৃষ্টি করতে পারে। 

এই কারণগুলোর মধ্যে কিছু অর্জিত(acquired), যেমন ভিটামিন অভাব এবং কিছু উত্তরাধিকারী সূত্রে(inherited) যেমন জেনেটিক রোগ। চোখের পরীক্ষা করে সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়। এই রোগ গুলো চিকিৎসা না করলে দৃষ্টিশক্তির আরো ক্ষতি হতে পারে। রাতকানার পাশাপাশি পেরিফেরাল দৃষ্টি কমে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত টানেল ভীষণ বা সম্পূর্ণ অন্ধত্ব হতে পারে।

৪. ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কিছু ওষুধ, বিশেষ করে যেগুলো ভিটামিন এ এর শোষণ বা রেটিনার কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে, তা রাতকানার কারণ হতে পারে। উদাহরণ যেমন- দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিহিস্টামিন, কিছু অ্যান্টি সাইকটিক ওষুধ বা ভিটামিন শোষণে বাধা দেয় এমন ওষুধ। ওষুধের ডোজ বা ধরন পরিবর্তন করলে এই সমস্যা কমতে পারে।
ফেনোথায়াজিন(মানসিক রোগের ওষুধ )বা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন(রিউমাট্যেড আর্থ্রাইটিসের ওষুধ)এর মতো ওষুধ। এবং চোখের সার্জারি যেমন ল্যাসিক বা ফটোরেফ্র্যাকটিভ কেরাটেকটমির পর অস্থায়ীভাবে হতে পারে। এবং তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাবে হতে পারে।

৫. বয়স জনিত কারণ

বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের লেন্স এবং রেটিনার কার্য ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যা রাতকানার কারণ হতে পারে। বয়স্কদের মধ্যে এটিই বেশি দেখা যায় তাই বয়স্কদের জন্য আরো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ যেমন- চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা হ্রাস,ও রেটিনার কোষের প্রাকৃতিক ক্ষয়। এটি বইয়ের জন্য তো ম্যাকুলার ডিজেনারেশন(AMD) এর সাথে ও এটি যুক্ত হতে পারে।

রাতকানা রোগের লক্ষণ সমূহ

রাতকানা রোগের লক্ষণগুলো প্রধানত কম আলোকে দেখার অসুবিধা নিয়ে হয়ে থাকে। রাতকানা রোগ যা চিকিৎসা পরিভাষায় নিকটালোপিয়া(Nyctaiopia) নামে পরিচিত।এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে কম আলোতে বা রাতে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি সাধারনত ভিটামিন এ এর ঘাটতি, চোখের রেটিনার সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হতে পারে। এগুলো ধীরে ধীরে বাড়তে পারে বা হঠাৎ দেখা দিতে পারে। প্রধান লক্ষণ গুলো হল যেমন-
১. আলো থেকে অন্ধকারে যাওয়ার সময় চোখের অভ্যস্ততা নিতে দীর্ঘ সময় লাগাঃ সাধারণত চোখ কয়েক সেকেন্ডে অভ্যস্ত হয়, কিন্তু রাতকানায় এটি মিনিট লাগতে পারে ।এটি রেটিনার রড সেলের সমস্যার কারণে হয়।
২. অন্ধকারে বা কম আলোতে স্পষ্ট দেখতে অসুবিধাঃ রাতে গাড়ি চালানোর সময় যানবাহন বা রাস্তার চিহ্ন দেখতে কষ্ট হয়। এটি রোগের মূল লক্ষন। উদাহরণস্বরূপ- সিনেমা হলে বা অন্ধকার ঘরে জিনিসপত্র দেখতে অস্পষ্ট লাগে। এবং রাতে বা আলো কম থাকা পরিবেশে( যেমন, সন্ধ্যা, গোধূলি বা অন্ধকার ঘরে) স্পষ্ট ভাবে দেখতে অক্ষমতা। আলো থেকে অন্ধকারে প্রবেশ করলে চোখের অভিযোজন(adjustment) ধিরগতিতে ।
৩. দৃষ্টিতে অস্পষ্টতা বা ঝাপসাঃ রাতে দূরের জিনিস ঝাপসা দেখায়, যা দিনের বেলায় কম হয়।এটি মায়োপিয়া বা ক্যাটার্যাক্টসের সাথে যুক্ত।
৪. রাতে গাড়ি চালানোর সময় মাথা ব্যাথা বা চোখের চাপঃ রাতে গাড়ি চালানোর সময় কম আলোতে চোখের  চাপ বাড়ায় ,ফলে মাথা ব্যাথা হয় ।এটি বিপদজনক, কারণ দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও বাড়ে।
৫. আলোর প্রতি সংবেদনশীলতাঃ আলোর পরিবর্তনে চোখের অভিযোজন ক্ষমতা কমে।  হঠাৎ উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে এলে চোখে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করা।
৬. চোখের অন্যান্য সমস্যাঃ চোখের সাদা অংশে শুষ্ক দাগ(বিটটস স্পট) দেখা দেওয়া,যা ভিটামিন এ এর ঘাটতির সাথে সংযুক্ত।চোখে জ্বালা পোড়া বা চুলকানি।
৭. অন্যান্য সংশ্লিষ্ট লক্ষণঃযেমন- রঙ্গিন দৃষ্টির সমস্যা,(জেনেটিক কারণে), চোখের শুষ্কতা বা পেরিফেরাল ভিশন হারানো। যদি আপনার এগুলো লক্ষণ দেখা যায় ,তাহলে দ্রুত চোখের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, কারন এটি অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। লক্ষণগুলো বয়স, জীবন ধাঁরা এবং অন্তর্নিহিত কারণ এর উপর নির্ভর করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি জেনেটিক হলে প্রথম থেকেই দেখা যায়।

প্রতিরোধে করণীয় উপাসমূহ

রাতকানা রোগের প্রতিরোধ সম্ভব হয় যদি তার কারণ অর্জিত হয়, তবে জেনেটিক কারণে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু নিম্নলিখিত উপায় গুলো অনুসরণ করে এর ঝুঁকি কমানো যায়।যেমন-
১. ভিটামিন এর সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণঃ ভিটামিন এ এর অভাব প্রতিরোধের জন্য গাজর এ রোয়েছে বিটা-ক্যারোটিনের চমৎকার উৎস। মিষ্টি আলুতে আছে-ভিটামিন এ-এর উচ্চ- উৎস।পালং শাক কচুশাক,লালশাক এগুতে রোয়েছে-প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন। কলিজাতে প্রাণীর উৎস হিসেবে ভিটামিন এ এর সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস রয়েছে। মাছে রয়েছে- বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন ,স্যামন বা টুনা, যেগুলো তে ভিটামিন এ এবং ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।

ডিমের কুসুমে রয়েছে ভিটামিন এ- এর ভালো উৎস।এবং দুধ ও দুগ্ধজাতে রোয়েছে-রেটিনল আকারে ভিটামিন এ । এবং জিংক ভিটামিন এ- এর শোষণে সহায়তা করে। বাদাম বীজ, ঝিনু্‌ক, মাংস এবং ডাল জিংকের ভালো উৎস।এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিয়াবিজ, আখরোট,ফ্ল্যাক্সসিড, এবং তৈলাক্ত মাছ এই উপাদান সরবরাহ করে।আর এগুলো রেটিনার স্বাস্থ্য রক্ষা 
করে। সার্জারির পর ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট নিন। কিন্তু অবশ্যই তো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নয় 
২. অন্তর নিহিত রোগ নিয়ন্ত্রণঃ রক্তে শর্করা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবংতা ওষুধ  এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে। এতে ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধ হয়। গ্লকোমার জন্য চাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ব্যবহার করুন।
৩. নিয়মিত চোখের পরীক্ষাঃ প্রতিবছর নিয়মিতভাবে চোখের পরীক্ষা করতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এতে মায়োপিয়া বা ক্যাটার্যাক্টসের মত সমস্যা প্রথমদিকে ধরা পড়ে।তবে বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারঃ মায়োপিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক চশমা রাতের দৃষ্টি উন্নত করে। এন্টি-রিফ্লেকটিভ রাতে গ্লেয়ার কমায়।
৫. জীবনধারা পরিবর্তনঃ রাতে গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত আলো ব্যবহার করুন এবং যদি সমস্যা হয়, তাহলে গাড়ি চালাবেন না। ধূমপান ত্যাগ করুন,কারন এটি ক্যাটার্যাক্টস বাড়ায়। সানগ্লাস পরে UV রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করুন। জেনেটিক কারণে প্রতিরোধ না হলেও চিকিৎসা দিয়ে লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যেমন-ক্যাটার্যাক্টস সার্জারি।
৬. ওষুধের প্রভাব পর্যবেক্ষণঃ যদি কোন ওষুধ রাতকানার সৃষ্টি করে, তাহলে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। বিকল্প ওষুধ বা ডোজ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
৭. অ্যালকোহল সীমিত করুনঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ভিটামিন এ- এর শোষণে বাধা দেয় এবং লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করে। যা ভিটামিন এ -এর বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৮. পর্যাপ্ত ঘুমঃঘুমের অভাব চোখের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
 ৯. শিশুদের জন্য বিশেষ যত্নঃ শিশুদের মধ্যে রাতকানা প্রায়শই ভিটামিন এ-এর ঘাটতির কারণে হয়। তাই শিশুদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ- সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। সরকারি স্বাস্থ্য ও কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের জন্য ভিটামিন এ- ক্যাপসুল প্রদান করা হয় ।এটি নিয়মিত গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
১০. পরিবেশগত সতর্কতাঃ ধুলো বালি বা রাসায়নিক পদার্থ থেকে চোখ রক্ষা করতে প্রতিরক্ষামূলক চশমা ব্যবহার করুন।

 কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

  • দৃস্টিতে ঝাপসা বা দাগ দেখা দেয়।
  • রাতে বা কম আলোতে দেখতে অসুবিধা হলে।
  • চোখে ব্যথা, লাল ভাব দেখা দিলে।
  • চোখ দিয়ে পানি বা আঠা জাতীয় পানি বাহির হলে।
  • চোখের শুষ্কতা ,জ্বালা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে।
  • ভিটামিন এ -এর ঘাটতির অন্যান্য লক্ষণ( যেমন ত্বকের সমস্যা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) থাকলে।
  • ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট বা অন্যান্য চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • চোখ ফুলে গেলে বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে।

শেষ কথাঃ

রাতকানা রোগ যা চিকিৎসকীয় ভাবে নাইকটা লোপিয়া নামে পরিচিত ,একটি দৃষ্টির সংক্রান্ত সমস্যা যা কম আলো বা অন্ধকার পরিবেশে স্পষ্ট ভাবে দেখতে অসুবিধা সৃষ্টি  করে।এটি ভিটামিন এ এর অভাবে হয়, বা জেনেটিক কারণে হয়। এই রোগটি দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে রাতে গাড়ি চালানো বা অন্ধকারে চলাচলে।
রাতকানা রোগ ও একটি সমস্যা, যা অনেক কারণে হয় কিন্তু সঠিক প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে চোখের বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত পরীক্ষা এবং জীবনধারা পরিবর্তন দিয়ে এটি প্রতিরোধ করুন।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url