ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়া গর্ভবতীর জন্য ভলো

ট্র লাভ ইজ ওয়ান কোকোনাট অ্যান্ডটুষ্ট্র।মানে একটি ডাব আর দুটি স্ট্র-ই হলো সত্যিকারের ভালোবাসা। কথা মন্দ নয়। সামনে নীল পানি রেখে বালুকা বেলায় দুজন মানুষ একটি ডাব খাবে দুটি স্ট্র , দিয়ে তার চেয়ে রোমান্টিক দৃশ্য আর কি হতে পারে। আর এর স্বাদ, ডেফিনেশন অব টেস্টিং প্যারাডাইস বলে একটা কথা আছে ইংরেজিতে। সেটা বলা হয় ডাবের পানির স্বাদ বোঝাতে।

 বুঝতেই পারছেন, শুধু আপনি নন। পৃথিবীর জনসংখ্যার এক বিশাল অংশের মানুষ ডাবের পানির স্বাদে বিমোহিত হয়ে আছে। কিন্তু কারণটা কি সাদ বা রোমান্টিক তাই শুধু নয়। ডাবের পানিতে আছে বিশাল স্বাস্থ্য গুণ। নিয়মিত ভাবে যদি কোন মানুষ ডাবের পানি খান তাহলে তার শরীর হবে বিষমুক্ত। আর এতে করে অনেক রোগ ধীরে ধীরে সরে যাবে তার শরীর থেকে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃডাবের পানির উপকারিতা

  • গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
  • ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা
  • প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ পূরনে ডাবের পানির উপকারিতা
  • গরমে ডাবের পানির উপকারিতা
  • শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষায় ডাবের পানির উপকারিতা
  • ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
  • ডাবের পানির উপাদান
  • ডাবের পানির অপকারিতা
  • ডাবের পানি পানে সতর্কতা
  • শেষ কথা

ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
  • ডাবের পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে।
  • ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম থাকে। ফলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে ক্যালসিয়াম জোগান দেয় শরীরে।
  •  এতে থাকা আঁশ শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  •  এটিতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
  •  চর্বির পরিমান  খুব কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • যেকোন কমল পানিয়ের থেকে এতে অনেক কম ক্যালোরি ও চিনি থাকে।
  • পানি শূন্যতা দূর করে।
  • পটাশিয়াম, সোডিয়াম ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারনে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • রোদের কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয় এবং শরীরের আর্দ্রতা হারায়। ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আদ্রতা বজায়  রাখে ।
  • এতে আঁশ থাকে বলে হজমে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য ডাবের পানি অনেক উপকারী। কারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলার শরীরে অনেক কিছু প্রয়োজন হয় তার নিজের ও সন্তানের জন্য। সে সময় ডাবের পানি সবকিছুর জন্য কাজ না করলেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ উপকার দেয় ।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি যা করতে পারে-
  • শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে বলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে।
  • পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম থাকে বলে ডাবের পানি ভ্রণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • শর্করার পরিমাণ খুবই কম বলে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।
  • গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে কোন কোন গর্ভবতী মহিলাকে স্বস্তি দিতে পারে।

ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা

ত্বকের জন্য ডাবের পানি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।আর এবিষয়ে এক হিন্দি ছবির নায়িকা মমতা কুলকার্নি কে নিয়ে সেই নব্বইয়ের দশকে একবার বেশ গুজব রটেছিল। কোন এক সিনেমার সেট থেকে তিনি নাকি চলে এসেছিলেন। কারণ মমতা প্রতি দিন ডাবের পানির ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন তার মুখ ধোয়ার জন্য। কিন্তু তার কোন ব্যবস্থা ছিল না।এই ডাবের পানি প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর।ডাবের পানি খেলেও তাদিয়ে ত্বক পরিস্কার করলে ত্বকের যে অনেক উপকার হয় সেসব বিষয় নিয়ে অনেক গবেষনা করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে।

এটি ত্বকে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আদ্রতা ধরে রাখে। কারণ এতে শর্করা ও অ্যামিনো এসিড থাকে বলে এটি শুস্ক ত্বকে পুষ্টি জগায় ও আদ্রতা বজায় রাখে। ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট উপাদান থাকে এ কথা মাউন্ট সিনা স্কুল অব মেডিসিনের একদল গবেষক জানিয়েছেন। এর কারনে ডাবের পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বক মসৃন হয়।

প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ পুরনে ডাবের পানির উপকারিতা

২০১৭-সালের একটি প্রাথমিক গবেষক জানাচ্ছে যে, ডাবের পানিতে এন্ট্রি ব্যাকটোরিয়াল উপাদান থাকে। যার ফলে এটি ব্রণ হওয়ার হাত থেকে তক রক্ষা করতে পারে। কারণ ডাবের পানিতে এন্ট্রি অক্সিডেন্ট সিস্টেমকে উন্নত করতে সহায়তা করে। যার কারণে এটি রেডি কেলের প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ করে দিয়ে তঁকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

সংক্ষেপেঃ
  • ডাবের পানি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • রং স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • ব্লাক হেডস দূর করতে সাহায্য করে।
  • আদ্রতা বজায় রাখে এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • কোলাজেন তৈরি করে।

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা

গরমে ডাবের পানি অনেক উপকারি। আমাদের দেশে গরমেই সাধারণত ডাবের পানি খাওয়া হয়। তবে ডাবের পানি শীতের দিনেও শরীরের যে উপকার করে গরমের দিনেও সেই একই উপকার করে। যার ফলে গরমের দিনে খাবেন বলে তা গাছে  না রেখে শীতের দিনেও কচি ডাবের পানি খাওয়া উচিত।আর ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ডাবের পানি অনেক উপকারি।আর এ ডায়রিয়া যেকোনো সময়েই হতে পারে।সেহেতু ডাবের পানি শীত,গরম উভয় সময়ের জন্যই বেশ কার্যকরী।

শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষায় ডাবের পানির উপকারিতা

  • শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেঃ পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেক্ট্রো লাইটে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া কি উচিতঃ এর কোন সঠিক উত্তর নেই। কারণ কোন গবেষণায় প্রমাণ করতে পারেনি যে, ডাবের পানি খালি পেটে খাওয়া ক্ষতিকর। আবার খালি পেটে ডাবের পানি খেলে যে উপকারের কথা বলা হয় তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে, যেকোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডাবের পানি খাওয়া ভালো।
  • এতে আঁশ থাকে বলে হজমে সাহায্য করেঃ রোদের কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয় এবং শরীর আর্দ্রতা হারায়। আর এই ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

ডাবের পানি খাওয়ার নির্দিস্ট কোনো নিয়ম নেই।তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।যেমন-
  • খেতে হবে কচি ডাবের পানি। ডাব যত বয়স্ক হবে তত তার পানিতে চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। সেটা আপনার ক্ষতিই করবে।
  • যেকোনো সময় ডাবের পানি খাওয়া যায়। তবে খুব রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ডাবের পানি না খাওয়াই ভালো। রোদ থেকে এসে একটু জিরিয়ে তারপর খাওয়া ভালো।
  • ডাব কাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে নিতে হবে।
  • ডাবের পানিতে অন্য কোন কিছু যেমন, চিনি,গুড়, লবণ ইত্যাদি মেশানো যাবে না।

ডাবের পানির উপাদান

  • পানি -৯৫শতাংশ
  • পটাশিয়াম-০.২৫শতাংশ
  • ক্যালসিয়াম-o.৬৯শতাংশ
  • ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড-০. ৫৯শতাংশ
  • ফসফরিক  অ্যাসিড-০৫৬শতাংশ
  • নাইট্রোজেন-০.০৫শতাংশ
গ্রাম/প্রতি ১০০গ্রামে আছে-
  • চিনি-০.৮০গ্রাম
  • লৌহ-০.৫গ্রাম
  • আঁশ- ০.৬২গ্রাম
  • চর্বি-০ .২০গ্রাম
  • প্রোটিন-০. ৭২গ্রাম
এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ আছে ডাবের পানিতে

ডাবের পানির অপকারিতা

ডাবের পানির অপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো। প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ দিকই থাকে। ডাবের পানির ও সেটা আছে। এর কিছু অপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক-

  • ডাবের পানিতে সোডিয়াম, পটাশিয়া্‌ম, ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আর এই উপাদান গুলো শরীরের উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাই্‌ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোন একটির পরিমাণ বেড়ে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাই্‌ট ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও রাখতে পারে।
  • আবার এটি রক্তচাপ কমিয়েও দিতে পারে।এসব কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁটির কারণ হতে পারে। বলা হয়ে থাকে কিডনি সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করা ভালো। কিন্তু কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণও হয়। কাজে ই যাদের কিডনি রোগ আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডাবের পানি খেতে পারেন।
  • নিয়ম করে ডাবের পানি খেতে হবে। উপকার করে বলে অপ্রয়োজনে এটি খাওয়া যাবে না। তাতে বরং ক্ষতি হওয়া আশঙ্কা থাকে।
  • অতিরিক্ত ডাবের পানি খেলে কারো কারো ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • যাদের ঠান্ডা রোগ আছে বা সর্দি রোগীদের বুঝে শুনে ডাবের পানি পান করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • কোন কোন এলার্জি রোগী ডাবের পানি পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে ন। কাজেই যাদের এলার্জি আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ডাবের পানি পান করবেন।

ডাবের পানি পানে সতর্কতা

ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। তবে ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে কিছু কিছু রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণ হতে পারে। আবার ঠান্ডা ও সর্দি, এলার্জি রোগীদের ক্ষেত্রেও ডাবের পানি পানে সতর্কতা থাকতে হবে। কারন এদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

শেষ কথাঃ

ডাবের পানির উপকারিতা অনেক বেশি। তবে কোন কিছু থেকে প্রাকৃতিকভাবে উপকার পেতে হলে তা দীর্ঘদিন খেতে হয় বা ব্যবহার করতে হয়। হঠাৎ এক-দুই দিন ব্যবহার করে ভালো উপকার পাওয়া যায় না। তাই ডাবের পানি পান করে উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত তা পান করতে হবে। খুব বেশি পান করার দরকার নেই ।পরিমাণ মতো নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে তবেই উপকার পাবেন।









এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url